১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ উদ্বোধন হওয়া এই জাদুঘরে প্রায় দশ হাজারের অধিক নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে অথবা আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে নিজস্ব জমিতে ঢাকার আগারগাঁও এ এই জাদুঘরের নিজস্ব ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জাদুঘরের নীচতলার গ্যালারিগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে অবিভক্ত বাংলায় ঘটে যাওয়া ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের ঘটনাবলি নিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া জাদুঘরের বেশীরভাগ বিভাগই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ধারন করে আছে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে দীর্ঘ নয় মাস বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী জনগনের ওপর ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা সংঘটিত করেছিল। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। গনতন্ত্র এবং স্বাধিকার আদায়ে এদেশের মানুষের অকুতভয় সশস্ত্র প্রতিরোধ এবং সংগ্রামকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
অজানা সাহস এবং প্রতিজ্ঞার ঘটনাবলির পাশাপাশি এই জাদুঘরে রয়েছে বিদ্রোহ, বিজয়, সাহসিকতা এবং বুকভাঙ্গা বেদনার মর্মস্পর্শী না বলা কথা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় একটি বোর্ড অফ ট্রাস্টি এই জাদুঘরটি পরিচালনা করছে। বর্তমানে এই জাদুঘরটি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংগ্রহে প্রায় ১৪০০০ সংগ্রহ রয়েছে। এসবের মধ্যে আছেঃ দুর্লভ ছবি, কাগজ পত্র, দেশী বিদেশী সংবাদপত্রে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং যুদ্ধাস্ত্র। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঢাকার অদুরে দুটি বধ্যভূমি খনন করে এবং সেখান থেকে আবিষ্কৃত হয় গণহত্যার শিকার শহীদদের দেহাবশেষ এবং ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী। এসকল দেহাবশেষ এবং ব্যবহার করা সামগ্রী প্রদর্শনীর মাধ্যমে জাদুঘরটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে জীবন্ত রূপ দান করেছে। তবে ভাড়া করা ভবনে জায়গার স্বল্পতার কারনে মাত্র ১৩০০ টি সংগ্রহ প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে, অতি শীঘ্রই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঢাকার আগারগাঁও এ নিজস্ব জমিতে নির্মিত নিজস্ব ভবন থেকে আরও বড় পরিসরে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সমসাময়িক বিভিন্ন আলোচিত সামাজিক এবং মানবাধিকারমূলক ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমেরিকান এসোসিয়েশন অফ মিউজিয়ামের সদস্য ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অফ হিসটোরিক সাইট মিউজিয়াম অফ কনশেন্স এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
এই জাদুঘরে আগত দর্শনার্থীরা অনুধাবন করতে পারেন কতটা ত্যাগের মাধ্যমে এদেশে গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, এবং জাতীয়তাবাদের মৌলিক নীতিগুলোকে সংবিধানের মাধ্যমে অধিস্তিত করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি জীবন্ত জাদুঘর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে করে এখানে আগত দর্শনার্থীরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সমাজে সচেতনতার সৃষ্টি করতে পারে।
এই জাদুঘরটি ঢাকার শাহবাগের সেগুনবাগিচায় অবস্থিত, ঢাকা শহরের যেকোনো স্থান থেকে লোকাল অথবা কাউন্টার সার্ভিস বাসে করে শাহবাগ চলে আসুন। সেখান থেকে রিকশা করে জাদুঘরে চলে আসুন।
এখানে ভ্রমন করে আপনি জাদুঘরের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন।
ঢাকা শহরে কোথায় খাবেন সেই পেইজটি দেখুন, ক্লিক করুন
প্রবেশ মুল্যঃ ৫ টাকা
খোলার সময়ঃ ১০ ঘটিকা
বন্ধের সময়ঃ সন্ধ্যা ৬ টা (গ্রীষ্ম)
সন্ধ্যা ৫ টা (শীত)
বন্ধের দিনঃ রবিবার
আপনার প্রশ্ন বা সমস্যার সহযোগিতা করায় আমরা সর্বদা তৎপর!
One thought on “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর”