কথিত ঠাকুরদীঘির উত্তর তীরে খান জাহানের দরগা অবস্থিত। এই দরগাটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৬৭.১ মিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিনে ৬৪.৭ মিটার দীর্ঘ দেয়াল দিয়ে ঘেরা। খান জাহানের দরগা কমপ্লেক্সটি উঁচু মাটির ঢিবির উপর অবস্থিত। এই কমপ্লেক্সে অবস্থিত একটি বর্গক্ষেত্র আকারের ভবনে খান জাহানের সমাধি, তাঁর দেওয়ান মুহাম্মাদ তাহিরের সমাধি, একটি এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং একটি কথিত রান্নাঘর রয়েছে। খান জাহানের সমাধিটির প্রতিটি দিকের মাপ বাইরে থেকে ১৩.৭ মিটার এবং ভেতর থেকে ৯.১ মিটার। ইট দিয়ে নির্মিত এই ভবনটি দরগা কমপ্লেক্সের প্রাণকেন্দ্র। ভবনটির চার কোণায় চারটি গোলাকার টাওয়ার রয়েছে। এছাড়া ভবনটির চার দেয়ালের প্রতিটির পুরুত্ব ২.৪ মিটার এবং মাটির আদ্রতা থেকে রক্ষা করতে দেয়ালের ০.৯ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পাথরের আবরন ব্যবহার করা হয়েছে। দক্ষিনবঙ্গের আদ্র আবহাওয়ায় মাটির আদ্রতা একটি সাধারণ ব্যাপার।
কি উদ্দেশ্যে ভবনটি নির্মিত হয়েছিল সেটি জানা যায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় জীবনের শেষ সময়ে খান জাহান আলী এই ভবনে বাস করতেন এবং পাশের ভবনটিকে রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন। মৃত্যুর পর খান জাহান আলীকে এই ভবনেই সমাহিত করা হয়। জানা যায় প্রায় শত বছর পূর্বে মসজিদ এবং দরগার দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত দুজন ফকির একই উদ্দেশ্যে এই ভবনটিকে ব্যবহার করতেন।
ঢাকার গাবতলি এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। আপনি এগুলোর যেকোনো একটি বাসে করে বাগেরহাটে পৌছাতে পারবেন। তাড়াহুড়ার মধ্যে না থাকলে আপনি পায়ে হেঁটে বাসস্ট্যান্ড থেকে দরগায় যেতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রধান সড়ক ধরে পশ্চিমে হাঁটতে হবে। কিছুক্ষন হাঁটার পরই দরগা চোখে পরবে আপনার।
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বাগেরহাটে পৌছাতে পারবেন। ঢাকা থেকে বাগেরহাটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে রয়েছঃ
১। মেঘনা পরিবহন
সায়েদাবাদ টার্মিনাল
যোগাযোগঃ ০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩
ভাড়াঃ ৩৫০/-টাকা
২। শাকুরা পরিবহন
গাবতলি টার্মিনাল
যোগাযোগঃ ০১৭১১০১০৪৫০
ভাড়াঃ প্রায় ৫০০/-টাকা
৩। পর্যটক পরিবহন
সায়েদাবাদ টার্মিনাল
যোগাযোগঃ ০১৭১১১৩১০৭৮
ভাড়াঃ প্রায় ৩৫০/-টাকা
৪। সোহাগ পরিবহন
গাবতলি টার্মিনাল
যোগাযোগঃ ০১৭১৮৬৭৯৩০২
ভাড়াঃ ৩৮০/- টাকা
প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা মধ্যে তিনটি লঞ্চ এবং একটি স্টিমার ঢাকার সদরঘাট থেকে পিরোজপুরের হুলারহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। হুলারহাটে পৌঁছে আপনাকে বাসে করে অথবা ভাড়া গাড়িতে করে সড়কপথে পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটে পৌছাতে হবে।
ঢাকার সদরঘাট থেকে পিরোজপুরের হুলারহাটের উদ্দেশ্যে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
• আল-খালাদি
• পার্বত
• ফারহানা
• টিপু
ছাড়ার সময়ঃ বিকাল ৫টা
পৌছানোর সময়ঃ সকাল ৯টা
ভাড়াঃ
রেগুলারঃ ১৮০/-টাকা
সিঙ্গেল কেবিনঃ ৫০০/-টাকা
ডবল কেবিনঃ ৮০০/-টাকা
বর্তমানে রাজধানী ঢাকার সাথে বাগেরহাটের আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। তবে, বাগেরহাটে একটি বিমানবন্দর নির্মাণাধীন রয়েছে। সুতরাং, অদুর ভবিষ্যতেই ঢাকা ও বাগেরহাটের মধ্যে আকাশপথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়।
বাগেরহাটে থাকার জন্য খুব বেশি হোটেল নেই। তবে এখানে রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলটিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামোটি ভাল এবং খরচও একটু বেশি। এছাড়া এই হোটেলের আশেপাশে থাকার জন্য আরো কিছু হোটেল রয়েছে।
খান জাহান আলীর দরগার সামনেই লেকের মত একটি পানি সংরক্ষণাগার রয়েছে। এই লেকে কয়েকটি মিঠা পানির কুমির বাস করে। এখানে আগত মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে তাঁরা যদি লেকের কুমিরগুলোকে ছাগল অথবা মুরগি খেতে দেয় তবে তাঁদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে। কেউ কুমিরদের কিছু খাওয়াতে চাইলে দরগার তত্ত্বাবধায়ক কুমিরগুলোকে নাম ধরে (কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়) ডাক দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই কুমিরগুলো এসে খাবার নিয়ে যায়। এই পুকুরে তিনটি মিঠা পানির কুমির রয়েছে।
দরগার কাছে এবং বাসস্ট্যান্ডের কাছে খাওয়ার জন্য কিছু ধাবা রয়েছে। তবে, এখানে খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই খাবারের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
এখানে তসবিহ, ক্ষুদ্র গয়না, টুপি, আতর ছাড়া কেনাকাটার জন্য বেশি কিছু পাবেন না।
আপনার প্রশ্ন বা সমস্যার সহযোগিতা করায় আমরা সর্বদা তৎপর!