শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) হল বাংলাদেশের সিলেটে অবস্থিত একটি সরকারি অলাভজনক গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে পিএইচডি ডিগ্রী দানকারী ৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল এটি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। পদার্থ, রসায়ন ও অর্থনীতি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সমাবর্তন যথাক্রমে ২৯ এপ্রিল ১৯৯৮ এবং ৬ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষায়িত দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হল এটি। শাবিপ্রবির পর দেশে আরও সাতটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা এবং গবেষণা করার সুযোগ প্রদানের কারনে শাবিপ্রবির রয়েছে আলাদা সুনাম। মেধার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং তীব্র প্রতিযোগিতার কারনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। ২০১২-১৩ শিক্ষা বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক মোট ৪০,৮৮১ জন দরখাস্তকারীর মধ্যে ১৩৮৫ জন ভর্তির সুযোগ লাভ করে।
বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শাবিপ্রবি ছাত্র, কর্মচারীদের জন্য পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই প্রযুক্তি চালু করে। এছাড়াও দেশে প্রথমবারের মত এই বিশ্ববিদ্যালয় সমষ্টিগত অনার্স কোর্স চালু করে এবং ১৯৯৬-৭ শিক্ষাবছর থেকে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মহা পরিকল্পনা অনুযায়ী অচিরেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অত্র অঞ্চলের সেরা বিদ্যাপীঠে পরিনত হবে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার সময় মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে। ২০০৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার এই প্রক্রিয়াটি চালু করেন। বর্তমানে বেশীর ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়তেই এই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। এই উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ শাবিপ্রবি ২০১০ সালে দেশে বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে লোকাল বাস অথবা সিএনজি অটো রিকশায় আপনি শাবিপ্রবিতে আসতে পারবেন।
ঢাকা থেকে সিলেটে আপনি সড়কপথে, রেলপথে এবং আকাশপথে পৌছাতে পারেন।
ঢাকা থেকে সিলেটের মধ্যে চলাচলকারি বাসগুলোর মধ্যে আছেঃ
১। গ্রীনলাইন পরিবহনঃ
ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়ঃ সকাল ৮:৩০ মিনিটে, সকাল ১০ টায়, বিকাল ৪:১৫ মিনিটে, বিকাল ৫:৩০ মিনিটে এবং রাত ১২:৩০ মিনিটে; ভাড়াঃ ৮৫০/- টাকা (ভলভো), ১১০০/- টাকা (স্কেনিয়া);
২। শ্যামলী পরিবহনঃ
আরামবাগ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ৭১০২২৯১, ০১৯৩৬২৬০২৩;
সায়েদাবাদ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ০১৭১৮০৭৫৫৪১, ৭৫১১০১৯, ৭৫৫০০৭১;
৩। হানিফ পরিবহনঃ
পান্থপথকাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ০১৭৩৪০২৬৭০
আরামবাগ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ০১৭১৩৪০২৬৭১
সায়েদাবাদ কাউণ্টার, ঢাকা, ফোনঃ ০১৭১৩৪০২৬৭৩
৪। টি আর ট্র্যাভেলস
৫। সোহাগ পরিবহন
উপরে উল্ল্যেখিত বাসগুলো প্রতিদিন ভোর ৬:৩০ মিনিট থেকে রাত ১১:৩০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকার মালিবাগ রেলগেট, রাজারবাগ এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিলেটের পথে ছেড়ে যায়। নন এসি এসব বাসের ভাড়া প্রায় ৫০০/- টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া প্রায় ৮০০/- টাকা থেকে ১০০০/- টাকা।
ঢাকা থেকে সিলেটে বাংলাদেশ বিমান, নভো এয়ার, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এবং রিজেণ্ট এয়ারওয়েজ দ্বিমুখী ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এসব বিমান সংস্থার একমুখি পথের ভাড়া পড়বে ৩০০০/- টাকা থেকে ৮০০০/- টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১০টির অধিক ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিলেটে আসা যাওয়া করে।
ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস এবং উপবন এক্সপ্রেস যথাক্রমে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় ছেড়ে যায়। এছাড়া বিকালবেলা নয়া সংযোজিত কালিনী এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রেলপথে সিলেটে পৌছাতে ৭ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। এসব ট্রেনের ভাড়া পরবে শোভন শ্রেণীর আসনের জন্য ২৯৫/- টাকা এবং তাপানুকুল প্রথম শ্রেণীর আসনের জন্য ৬৭৯/- টাকা।
ট্রেনের যাত্রার সময়সূচী:
১।কালিনী এক্সপ্রেসঃ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বিকাল ৪ টায়; সিলেটে পৌঁছে রাত ১০:৩০ মিনিটে; বন্ধের দিনঃ শুক্রবার;
২। পারাবত এক্সপ্রেসঃ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় সকাল ৬:৪০ মিনিটে; সিলেটে পৌঁছে দুপুর ১:৩৫ মিনিটে; সিলেট থেকে ছেড়ে যায় দুপুর ৩ টায়; ঢাকায় পৌঁছে রাত ১০:৩০ মিনিটে; বন্ধের দিনঃ মঙ্গলবার;
৩। উপবন এক্সপ্রেসঃ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় রাত৯:৫০ মিনিটে; সিলেটে পৌঁছে ভোর ৫:৩০ মিনিটে; সিলেট থেকে ছেড়ে যায় রাত ১০ টায়; ঢাকায় পৌঁছে ভোর ৫:৩০ মিনিটে; সিলেটে বন্ধের দিন নেই তবে ঢাকায় বন্ধের দিনঃ বুধবার;
৪। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসঃ ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় দুপুর ১২ টায়; সিলেটে পৌঁছে রাত ৭:৫০ মিনিটে; সিলেট থেকে ছেড়ে যায় সকাল ৮:২০ মিনিটে; ঢাকায় পৌঁছে বিকাল ৪ টায়; সিলেট ও ঢাকায় ট্রেনটির কোন বন্ধের দিন নেই;
শ্রেণীভেদে এই ট্রেনগুলোর ভাড়া ৭৫/- টাকা থেকে ১০১৮/- টাকা পর্যন্ত।
সিলেটে থাকার জন্য বেশকিছু ভালমানের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের বেশীরভাগ মাজার রোড, আম্বরখানা, এবং জিন্দাবাজারে অবস্থিত। এসব হোটেলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ
১। হোটেল ইস্টার্ন গেইট এন্ড পানাহার রেস্টুরেন্ট।
২। হোটেল গুলশান।
৩। হোটেল দরগা ভিউ।
৪। গ্রিনল্যান্ড হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট।
৫। হোটেল সিটি লিঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল।
৬। সুরমা ভ্যালী রেস্ট হাউজ।
৭। হোটেল বাহারাইন রেসিডেনসিয়াল।
৮। হোটেল কুরাইশি রেসিডেন্স।
৯। হোটেল আজমীর।
১০।হোটেল পায়রা।
১১।হোটেল সুপ্রিম।
১২।হোটেল পলাশ।
১৩।হোটেল ওয়েস্টার্ন।
১৪।হোটেল অনুরাগ।
১৫।হোটেল আল-আমীন।
১৬।হোটেল গার্ডেনস ইন।
১৭।হোটেল ফেরদৌস।
১৮।হোটেল পানামা।
১৯।হোটেল গ্রীন।
২০।হোটেল হিলটাউন।
২১।হোটেল রোজভিউ।
২২।হোটেল স্টার প্যাসিফিক।
২৩।হোটেল তাজমহল।
শহর থেকে দূরে প্রকৃতির সবুজে ঘেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস আপনি ঘুরে দেখার পাশাপাশি এখানকার বিভিন্ন বিভাগ এবং ছাত্রছাত্রীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের আলাদা আলাদা ক্যান্টিনে আপনি ভাল মানের খাবার পাবেন।
আপনার প্রশ্ন বা সমস্যার সহযোগিতা করায় আমরা সর্বদা তৎপর!